সিয়ামের ফজিলত সম্পর্কে আল-কুরআন এবং সহীহ হাদিস থেকে যা পাওয়া যায় তা হলো-
আউযুবিল্লা- হি মিনাশ শাইত্বা-নির
রাজীম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আল-হামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাদের রমজান মাস কে
পাইয়ে দিয়ে সম্মানিত করেছেন এবং গুনাহ মাফ পাবার জন্য সুযোগ করে দিয়েছেন । দুরুদ ও
সালাম রাসূল সাঃ এর প্রতি তার আনিত বিধানই মনবতার মুক্তির আসল পথ ।
সিয়াম নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্ব পূর্ন
এবং ফজিলত পূর্ন ইবাদত এবং জান্নাতে যাবার জন্য একটি অন্যতম বিশেষ আমল । সিয়াম করে
বলা হচ্ছে ঢাল স্বরূপ ।
আমাদের আজকের আলোচিত বিষয় হলো
সিয়ামের ফজিলত, আল-কুরআন এবং সহীহ হাদিস থেকে যা পাওয়া যায় তা হলো-
১। সিয়াম ফরজ ইবাদত ।
অবশ্যই সিয়াম/রোজা একটি গুরুত্বপূর্ন
ইবাদত এবং নাজাতের অন্যতম মাধ্যম তা না হলে এই ইবাদত কে ফরজ করে দেয়া হতো না । এর
মাধ্যমে অবশ্যই আল্লাহ তাআলা বিশেষ অনুগ্রহ দান করবেন তাই এই ইবাদত সাবার জন্যই
ফরজ করে দিয়েছেন । যেমন তিনি বলেন-
يَا أَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُواْ
كُتِبَ عَلَيْكُمُ
الصِّيَامُ كَمَا
كُتِبَ عَلَى
الَّذِينَ مِن
قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ
تَتَّقُونَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয
করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের
পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।
[ সুরা বাকারা আয়াতঃ ১৮৩ ]
২। সিয়ামে পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ হয় ।
যারা আল্লাহর নির্দেশিত এই ইবাদত
সন্তুষ্ট চিত্তে ফরজ হিসাবে মেনে নিয়ে নাজাতের আশায় সিয়াম পালন করে আল্লাহ তাদের
গুনাহ মাফ করে দিবেন যেমন আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্নিত, রাসূল সাঃ বলেছেন- যে
ব্যক্তি ঈমানসহ পূণ্যের আশায় রমযানের সিয়াম ব্রত পালন করে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (বুখারী-৩৮)
৩। সিয়াম পালন কারির সওয়াব অধিক হারে
দেয়া হবে।
সিয়াম পালন কারির প্রতিদান বর্ননা
করতে বলা হয়েছে সিয়াম পালন কারিকে ১০ থেকে ৭০০ গুন বেশি সওয়াব দেয়া হবে যা অন্য
কোন ইবাদতের বেলায় এত বেশি বলা হয় নি ।
৪। সিয়াম আল্লাহর নিকট একটি
মর্যাদাপূর্ন ইবাদত ।
আল্লাহ তাআলা সকল ইবাদতের মধ্যে থেকে
সিয়ামকে নিজের জন্য খাস করেছেন কারন সিয়াম আল্লাহর কাছে একটি মর্যদাপূর্ন ইবাদত ।
সিয়াম পালন করি ইখলাসের যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে থাকে কেনান সে চাইলেই গোপনে খেয়ে নিতে
পারে কিন্তু খায় না । আবার চাইলেই গোপনে স্ত্রীর নিকট গমন করতে পারে কিন্তু করে না
।
৫। সিয়ামের প্রতিদান আল্লাহ তাআলা
নিজে দিবেন ।
আল্লাহ তাআলা হাদিসে কুদসিতে বলেন-
প্রতিটি আমলের কাফ্ফারা রয়েছে, সে সব আমলের ত্রুটি দূর করার জন্য। কিন্তু সওম আমার জন্যই, এতে লোক দেখানোর কিছু নেই, তাই আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব। (বুখারী ৭৫৩৮)
আল্লাহ হলেন সবচেয়ে বড় দানশীল এবং
অনুগ্রপ্রদান কারী আর আল্লাহ যখন এর প্রতিদান দিবেন তখন অনেক বড় কিছুই দিবেন । হতে
পারে এটিই তার জন্নাতে যাবার জন্য যথেষ্ট ।
৬। সাওম ঢাল স্বরূপ ।
সিয়াম মানুষ কে জাহান্নামের আগুন
থেকে রক্ষা করবে । যেমন রাসূল সাঃ বলেছেন,
সিয়াম ঢাল স্বরূপ যার দ্বারা সিয়াম
পালনকারী নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে পারে (মুসনাদ আহমাদ ১৫২৬৫)
৭। কিয়ামতের দিন সিয়াম সুপারিশ করবে
।
সিয়াম কিয়ামতের দিন তার আদায় কারির
জন্য সুপারিশ করবে যেমন হাদিসে এসেছে
আমর রাঃ হতে বর্নিত রাসূল সাঃ বলেন,
সিয়াম ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ
করবে । সিয়াম বলবে, হে আল্লাহ আমি তাকে পানাহার ও যৌনাচার হতে বিরত রেখেছি সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহন করুন ।
কুরআন বলবে হে আল্লাহ আমি রাতের ঘুম থেকে তাকে বিরত রেখেছি, সুতরাং তার ব্যাপারে
আমার সুপারিশ কবুল করুন । উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে । (আহমদ ৬৬২৬)
৮। ইফতারের পূর্বে দোয়া কবুল করা হয়
।
সিয়াম পালন কারির জন্য অন্য একটি
ফজিলত হলো, ইফতারের পূর্বে সিয়াম পালন কারির দোয়া কবুল করা হয় ।
৯। সিয়াম পালন কারি আল্লাহর দিদার
লাভ করবে ।
সিয়াম পালন কারি কে আল্লাহ অত্যন্ত
ভালোবাসেন এবং তিনি বলবেন সাওম পালন কারীরা কোথায় ? তারা যেন রাইয়ান নামক দরজা
দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করে, ওই দরজা দিয়ে সাওম পালনকারীরা ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করতে
পারবে না ।
১০। সিয়াম পালন কারির মুখের গন্ধ
আল্লাহর কাছে মিসকের চেয়ে অধিক প্রিয় ।
সিয়াম পালন করার ফলে মানুষের স্টমাকে
খাদ্য শুন্যতার সৃষ্টি হয় এবং খাদ্য শুন্য স্টমাকে এসিড ক্ষরনের ফলে যে গ্যাস বা
গন্ধের সৃষ্টি হয় তা আল্লাহ তাআলার কাছে অধিক প্রিয় কারন এগুলো তো তার হুকুম
পালনের জন্যই হয়ে থাকে আর তাই তা তার কাছে মেশকের চেয়েও অধিক প্রিয় ।
(বুখারী-২৮০৩)
আল্লাহ আমাদের সাওম পালনের মাধ্যমে আখিরাতে সম্মানিত হবার তৌফিক দান করুন আমিন
মন্তব্য