ইমামের পিছনে যখন আমরা জামাআতে সলাত আদায় করি তখনও কি আমাদের সুরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে ? অথবা যখন ইমাম সাহেব আস্তে আস্তে বা মনে মনে তিলাওয়াত করেন
সমস্ত প্রশংসা আসমানের মালিকের যিনি আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন যা আমরা জানতামনা আর আমাদের কে দ্বীন হিসাবে দিয়েছেন ইসলামকে এবং তৌফিক দান করেছেন তা মেনে নেবার । (আল-হামদুলিল্লাহ)
দরুদ ও সালাম রাসূল সাঃ এর জন্য যিনি আমাদের নেতা এবং মুক্তির পথ তথা দ্বীন ইসলামের শিক্ষক ।
আজকের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন যা সলাতের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ । এমন যে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন - সুরা ফাতিহা যে পড়লো না তার সালাতই পূর্ন হলো না । (বুখারী ৭৫৬) অর্থাৎ এটি সলাত হওয়া, না হওয়া প্রসংঙ্গ । আল্লাহ আমাদের এই বিষয়ে সঠিক টা বুঝার তৌফিক দান করুন আমিন ।
আলহামদুলিল্লাহ সকলেই এই হাদিসের উপর একমত যে আমাদের অবশ্যই সলাতে সুরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে নতুবা আমাদের সলাত হবে না । তবে ইমামের পিছনে যখন আমরা জামাআতে সলাত আদায় করি তখনও কি আমাদের সুরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে ? অথবা যখন ইমাম সাহেব আস্তে আস্তে বা মনে মনে তিলাওয়াত করেন (যেমনঃ যোহর এবং আসর এর সলাতে) ।
উত্তরঃ জ্বী আমাদের সুরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে ।
কেন পাঠ করতে হবে ? যেখানে আল্লাহ তাআলা বলেছেন যখন কুরআন তিলাওয়াত হয় তখন তোমরা চুপ থাকো । (সুরা আল-আরাফ, আয়াতঃ ২০৪)
- [message]
- আল্লাহ তাআলা বলেন-
- وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُواْ لَهُ وَأَنصِتُواْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তাতে কান লাগিয়ে রাখ এবং নিশ্চুপ থাক যাতে তোমাদের উপর রহমত হয়। [ সুরা আরাফ' ৭ আয়াতঃ ২০৪ ]
সুরা আল আরাফে আল্লাহ তাআলা যে নির্দেশ দিয়েছেন তা আল-কুরআনের সকল সুরার জন্য সকল আয়াতে জন্য প্রযজ্য । অর্থাৎ যখনি কুরআন তিলাওয়াত শুনবো তখনি চুপ করে শুনতে হবে আর এতে করে আমাদের উপর রহমত হবে ।
তবে সলাতে সুরা ফাতিহা তিলাওয়াত করা সলাতের জন্য খাস (নির্দিষ্ট) এবং সলাতের বাহিরে যখন আমরা সুরা ফাতিহা তিলাওয়াত শুনবো তখনই আমাদের উচিত চুপ করে তিলাওয়াত শুনা ।
২য়ঃ
সলাতে একটি নির্দিষ্ট স্থানে সুরা ফাতিহা পড়া হয়, তা হলো তাকবিরে তাহরিমা পড়ার পর ছানা পাঠ করে । এছাড়া প্রতি রাকাতের প্রথমে ।
এটি এমন একটি স্থান যেখানে শুধু সুরা ফাতিহা'ই পড়া হয়, অন্য কোন সুরা এখানে পড়া হয় না, এই স্থানটি সুরা ফাতিহার জন্য নির্দিষ্ট ।
উললেখ্য যে, সুরা ফাতিহা পাঠের পর যখন আমরা সুরা মিলিয়ে অন্য সুরা পড়ি সেই স্থানে অন্য যে কোন সুরা পড়তে পারি এখানে কোন নির্দিষ্ট সুরা নেই ।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে একটি নির্দিষ্ট স্থানের জন্য একটি নির্দিষ্ট নির্দেশ, অর্থাৎ পড়তেই হবে । আর অন্য নির্দেশনাতে, সকল স্থানের জন্য চুপ থাকার নির্দেশ ।
এই বিষয়টিকে কি আরো সহজ ভাবে ব্যাখ্যা করা যায় ?
জ্বী এই বিষয়টিকে আরো সহজ ভাবে ব্যাখ্যা করে পারি আর এতে করে আমাদের কাছে বিষয়টি একদম ক্লিয়ার হয়ে যাবে ।
যেমনঃ আমরা যদি সুরা মায়েদার ৩ নং আয়াত দেখি
আল্লাহ তাআলা বলেন - তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে জবাহ্ হয়, যা কন্ঠরোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা যায়, যা উচ্চ স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যা, যা শিং এর আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে, কিন্তু যাকে তোমরা যবেহ করেছ সেগুলো ছাড়া।
- [accordion]
- পুর্নাঙ্গ আয়তটি দেখুন- সুরা মায়েদা আয়াত ৩
- حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالْدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللّهِ بِهِ وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيحَةُ وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ إِلاَّ مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَن تَسْتَقْسِمُواْ بِالأَزْلاَمِ ذَلِكُمْ فِسْقٌ الْيَوْمَ يَئِسَ الَّذِينَ كَفَرُواْ مِن دِينِكُمْ فَلاَ تَخْشَوْهُمْ وَاخْشَوْنِ الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا فَمَنِ اضْطُرَّ فِي مَخْمَصَةٍ غَيْرَ مُتَجَانِفٍ لِّإِثْمٍ فَإِنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়, যা কন্ঠরোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা যায়, যা উচ্চ স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যা, যা শিং এর আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে, কিন্তু যাকে তোমরা যবেহ করেছ। যে জন্তু যজ্ঞবেদীতে যবেহ করা হয় এবং যা ভাগ্য নির্ধারক শর দ্বারা বন্টন করা হয়। এসব গোনাহর কাজ। আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীন থেকে নিরাশ হয়ে গেছে। অতএব তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় কর। আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। অতএব যে ব্যাক্তি তীব্র ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে; কিন্তু কোন গোনাহর প্রতি প্রবণতা না থাকে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা ক্ষমাশীল। [ সুরা মায়েদা আয়াতঃ ৩ ]
অর্থাৎ আমাদের জন্য মরা সকল জিনিসই হারাম অর্থাৎ হালাল পশু মরা হলেও হারাম এমন কি যদি আল্লাহর নাম ছাড়া যবেহ করা হয় তবুও হারাম ।
তাহলে আমাদের জন্য মরা মাছ খাওয়া কি জায়েজ ? যা আমরা কখনো যবেহ করি না ।
উত্তরঃ জ্বী আমাদের জন্য মরা মাছ খাওয়া জায়েজ কারন রাসূল সাঃ জায়েজ বলেছেন ।
- [message]
- রাসূল সাঃ বলেন-
- وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم -: «أُحِلَّتْ لَنَا مَيْتَتَانِ وَدَمَانِ، فَأَمَّا الْمَيْتَتَانِ: فَالْجَرَادُ وَالْحُوتُ، وَأَمَّا الدَّمَانِ: فَالطِّحَالُ وَالْكَبِدُ» أَخْرَجَهُ أَحْمَدُ وَابْنُ مَاجَهْ، وَفِيهِ ضَعْفٌ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ খাদ্যরূপে ‘দু’প্রকারের মৃত প্রাণী এবং দু’প্রকার রক্তকে আমাদের (মুসলিমদের) জন্য হালাল করা হয়েছে। দু’প্রকার মৃত প্রাণী হচ্ছেঃ টিড্ডি (পঙ্গপাল) ও মাছ। এবং রক্তের দু’প্রকার হচ্ছে- (হালাল প্রাণীর) কলিজা ও হৃৎপিণ্ড।’
[ আহমাদ (৫৬৯০); ইবনু মাযাহ (৩৩৪১); ]
ঠিক তেমনি কুরআন তিলাওয়াতের সময় চুপ থাকার নির্দেশ দেবার পাশা-পাশি আল্লাহ তাআলা শুধু মাত্র সলাতে সুরা ফাতিহা পাঠ করার নির্দেশ রাসূল সাঃ এর মাধ্যমে দিয়েছেন । সুতরাং বুঝা যাচ্ছে সলাতে সুরা ফাতিহা পাঠ করতেই হবে, আর তা একা একা হোক আর ইমামের পিছনে হোক ।
সলাতে ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা পাঠ করা কি সাহাবায় কেরাম থেকে প্রমানিত ?
জ্বী, সাহাবায় কেরাম সলাতে ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা পাঠ করতে । যেমনঃ
- [message]
- রাসূল সাঃ বলেন-
- আবূস সায়িব, আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি কোন সালাত পড়লো এবং তাতে উম্মুল কুরআন (সূরা ফাতিহা) পড়েনি তার সালাত অসম্পুর্ন। আবূস সাইব (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আবূ হুরায়রা! আমি কখনো কখনো ইমামের সাথে সালাত পড়ি। তিনি আমার বাহুতে খোঁচা দিয়ে বলেন, হে ফারিসী! তুমি তা মনে মনে পড়ো।
[মুসলিম ৩৯৫, তিরমিযী ২৯৫৩, নাসায়ী ৯০৯, আবূ দাঊদ ৮১৯-২১, আহমাদ ৭২৪৯, ৭৭৭৭, ৭৮৪১, ৯২৪৫, ৯৫৮৪, ৯৬১৬, ৯৮৪২, ৯৯৪৬; মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৮৯। তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: সহীহ আবী দাউদ ৭৭৯।]
সর্বপরি আলেমদের নিকট সর্বাধিক সহিহ মতামত হলো, সলাতে একাকি এবং ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা তিলাওয়াত করা । তবে অনেকের মতে এটি ওয়াজিব নয় তবে পড়া জায়েজ ।
মন্তব্য